Saturday 16 July 2016

রাতের আড্ডায় ভূত

রাতের আড্ডায় ভূত

আইডিয়াটা ছিল পুঁটুর। সদ্য ক্লাসের অ্যানুয়াল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন কিছুদিন ছুটি। নতুন বছর শুরু হলেই স্কুল খুলবে। এখন বড়দিনের ছুটিও চলছে তাই ছোটকার কলেজ ছুটি... মামাত ভাইবোন, খুড়তুত ভাইবোন... সবাই এসেছে... তাই...একদিন সবাই মিলে রাত জেগে আড্ডা, তাস-দাবা-লুডো খেলা হবে... রাত জেগে বড়রা খেলতে পারে আর আমরা পারব না? পরীক্ষার সময় তো রাত জাগলে বড়রা কিচ্ছু বলেনা ... এর বেলাই বা বকবে কেন? বুঁচু বলল – “ দাদা ভাই... তোদের তো আবার রাত্তিরে আজকাল লোডশেডিং হচ্ছে ...” , বাপি বলল – “ কোন ব্যাপার না... মেজপিসির ঘরে এমারজেন্সি লাইট আছে তো...”, পাপান বলল – “দূর ও তো কবেই খারাপ হয়ে পড়ে আছে...” , বাপি বলল – “তাহলে ?”, ছোটকা বলল – “ ন-কাকির ঘরে হারিকেন আছে... ওটাই জ্বালা যাবে খন...” , বুঁচু বলল – “ ওকে” । সব প্ল্যান হয়ে গেল... কাল শনিবার আছে... কাল মাসতুত ভাই রঞ্জন আসবে... পুঁটু, বুঁচু,বাপি, সোনাই, মঞ্জু, খোকনদা, পাপান, ছোটকা আর রঞ্জন সবাই মিলে... রাত্তিরে আড্ডা, খেলা হবে... সকালে ক্রিকেট ম্যাচ, বিকেলে পুলিশ কোয়ার্টারের মাঠে ফুটবল, আড্ডা দেওয়ার টাইম-ই হয়না। পাপান স্কুল থেকে এক্সকারসনে গিয়েছিল তার গল্প, খোকনদা রাজস্থান বেড়াতে গিয়েছিল পুজোর সময় তার গল্প , বুঁচু এবার ডান্স ইন্দিয়া ডান্স -এ গিয়েছিল – মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে আলাপের গল্প – এসব শুনতে হবে তো...!!!

       মা, দিদা, কাকিমা শুনেই তো হাঁই হাঁই করে উঠল ... “ এই শীতের রাত্তির জেগে আড্ডা দিতে হবে না... সারা সন্ধ্যে আছে কি করতে... তখন টিভি না দেখে আড্ডা দিতে পারিস না... তোদের জন্য... আমরা সিরিয়াল দেখতে পারি না...”। বাবা, কাকা ... তেমন কিছু বলল না... শুধু বলল ... “বেশী রাত জাগিস না...ঠাণ্ডা লেগে যাবে ।”

       সেদিন রাত্তিরে খাওয়া দাওয়া সেরে আমরা চলে এলাম ছোটকার ঘরে... দোতলায়। বাবা কাকা- রা নীচের ঘরে বসে টিভি দেখছে ... আর মা কাকিমা রা রান্নাঘরে কাজ সারছে। ছোটকা কম্পিউটারে গান চালাল... আমরা মেঝে-তে শতরঞ্চি পেতে বসলাম। টুকটাক গল্প চলছে। রঞ্জন আর খোকনদা মোবাইল-এ গান ট্রান্সফার করছে... মঞ্জু একবার গেম খেলবে বলে বায়না করল... পাপান একটা চাঁটি মারতেই চুপ করে গেল। পুঁটু, বুঁচু তাস সাজাচ্ছে আর বাপি, সোনাই লুডো-র বোর্ড সাজাচ্ছে।  খোকনদা একবার উঠে তার রাজস্থানে বেড়ানোর ছবি গুলো কম্পিউটারে লোড করে নিল... সবাই সেগুলো দেখলো আর গল্প শুরু করলো... খোকনদা বলতে থাকল রাজস্থানের গল্প আর... পাপান তার এক্সকারসনের গল্প...

       বাবা মা কাকু-রা একবার করে এসে গুডনাইট করে আর তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে বলে চলে গেল... সবাই তখন মন দিয়ে খোকনদার গল্প শুনছে আর ছবি দেখছে... সবে মরুভূমির কথা শুরু হতেই ঝপ করে লোডশেডিং...!!! কি আর করা যায়... কম্পিউটার টা অফ করে... সবাই হারিকেন জ্বালিয়ে তাকে ঘিরে বসল। লুডো আর তাস খেলা শুরু হল।
      
       “অ্যাই... তোর চার পড়ল আর তুই মই দিয়ে উঠলি কেন?” – মঞ্জু চেঁচিয়ে উঠল । বুঁচু ও কম যায়না – “কোথায় চার! ভালো করে দেখ ওটা ছয় !”... “ফের চোট্টামি করছিস...!” মঞ্জু আর বুঁচুর মারপিট লেগে গেল... ছোটকা তাস রেখে গিয়ে থামাল... “আবার মারপিট করলে... খেলতে দেব না... ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়বি !” আবার এসে বসতে না বসতেই ... বাপি বলল... “ছোটকা... একবার বাথরুম যাব ...”...“ যা না...কে বারণ করেছে !” ... বাপি কাঁচুমাচু হয়ে বলল- “ছোটকা... একবার চল না...”। পুঁটু বলল... “তুই না ফাইভে পড়িস আর... ক্লাসের মনিটর...” বাপি আরও কাঁচুমাচু হয়ে বলল- “ছোটকা... একবার চল না...প্লিজ ”। অগত্যা ছোটকা তাস রেখে আবার উঠল... “আর কেউ যাবি তো চল...আমি বার বার যেতে পারব না”... সোনাই এগিয়ে গেল... ছোটকা খিকখিক করে হেসে বলল - “তুই ও !” সোনাই গম্ভীর হয়ে বলল... “তুই যা ভাবছিস তা নয়...বার বার আলো নিয়ে যেতে হবে তো... তাই...” ছোটকা খিকখিক করে হেসে ওদের নিয়ে চলে গেল...
      
       “তুই আলো টা নিভিয়ে দিলি কেন... বাজে ছেলে একটা...!” বলতে বলতে ওরা ফিরে এল... আবার গল্প শুরু হল... পাপান, ছোটকা আর খোকনদা তাস খেলছে... রঞ্জন, মঞ্জু, বুঁচু, বাপি লুডো আর... পুঁটু, সোনাই সবার মোবাইল নিয়ে ছবি দেখছে আর গান শুনছে...গেম খেলছে... আর টুকটাক গল্প চলছে ... রাত কত হল... কারো খেয়াল নেই... ছোটকা মাঝে মাঝে মোবাইল টা ফেরত নিয়ে টাইম দেখছে আর... একবার করে বলছে... “অনেক রাত্তির হল... এবার শুতে যা ...” ... যদিও কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না...
      
       বুঁচুই প্রথম দেখে... লুডো খেলা প্রায় শেষের দিকে... একটা হাই তুলে... জানলার দিকে দেখে... “ওটা কে রে...!” – বলার সঙ্গে সঙ্গেই সবার জানলার দিকে তাকাল... একটা বুড়ির মুখ... হারিকেনের আলো টা পড়েছে ... মুখটা ভাল বোঝা যাচ্ছে না  ...  দুটো চোখ জ্বলছে আর সাদা দাঁত... সবাই... দম বন্ধ করে বসে রইল খানিকক্ষণ... প্রথম মঞ্জু চিৎকার জোড়ে ... “ ও ও ও  মাআআআআ গোওওওও...” তার পর বুঁচু, পুঁটু, বাপি, সোনাই একসঙ্গে চেঁচিয়ে ওঠে ... খোকনদা, ছোটকা কাঠ হয়ে বসে... রঞ্জন – “ভুউউউউউউ...” আর পাপান – “অ্যাই যা যা যা যা... হুসস...” যেন কাক তাড়াচ্ছে... কতক্ষণ কে জানে... একটানা ... সবাই চিৎকার করে যায়... তারপর সবাই থামে ... ওদিকে দরজায় ধাক্কা শুরু হয়েছে... মা,বাবা,কাকুর ডাক - কি হল রে... দরজা খোল...!” ছোটকা কোনরকমে গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়... সবাই হুড়মুড় করে ঘরে ঢোকে... - কি হল রে...কি হয়েছে?” বুঁচু, পুঁটু, বাপি, সোনাই , খোকনদা সবাই এক সঙ্গে বলে ওঠে... “ভু ভুউউউউউউ... ভুউউউউউউ...”  “...কি ভু ভু করছিস...কি সেটা?” ... খোকনদা, ছোটকা কোনরকমে ব্যাপারটা বলে। “ঐযে ওদিকে...” ছোটকা দেখিয়ে দেয়... তখনও কারেন্ট আসেনি... আর জানলায় তখন...

       জানলায় তখন বাইরে থেকে মুখ বাড়িয়ে দেখছে ... ন-দিদা !
কি গো ন-দি ওখানে কি করছ ?” - মেজ কাকিমা জিজ্ঞেস করল। “আমি এই বাথরুম করতে উঠেছিলুম... ছোটর ঘরে আলো জ্বলছে দেখে দেখতে এলুম কি করছে সব... তা এরা সব এমন চেঁচামেচি জুড়ে দিলে যে ঘাবড়ে গেলুম...” তা সব চেঁচাচ্ছে কেন ?”
      

       বোঝ ব্যাপারটা... ন-দিদা জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখতে এল... আর সবাই... সবাই একটু অপ্রস্তুত... মা-কাকিমা, বাবা কাকা রা ব্যাপারটা বুঝে হাসতে লাগল। আর পুঁটু, বুঁচু,বাপি, সোনাই, মঞ্জু, খোকনদা, পাপান, ছোটকা আর রঞ্জন সব চুপ। “এই সাহস নিয়ে তোরা রাত জাগছিস...হা হা হা...!”- মেজকাকার কি হাসি... বুঁচু একবার বলতে গেল... “আমি ভয় পাইনি...” তাতে ওদের হাসি আরও বেড়ে গেল... ছোটকা বলে... “আমি তো ওদের সাহস দিচ্ছিলাম...” খোকনদা বলে – “আর বলিস না... তুই তো চোখ বন্ধ করে বসে ছিলি...আমিই তো তোকে সাহস দিলুম সবাই ডাকছে ... দরজাটা খোল...” ছোটকা বলে... “তা তুই তো যেতে পারতিস...আমাকে বলার কি আছে...” ... সবাই বলল - “অনেক হয়েছে... চল সব শুতে চল... অনেক রাত হল... আর আড্ডা দিতে হবে না। এবার সত্যি সত্যি ভূত আসবে... হা হা হা...”। সব সুড়সুড় করে নিজের ঘরে চলল ।